দৈনিক জাগো বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক

অভিবাসী বান্ধব পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তেনিও কস্তা’র পদত্যাগ!!!

0 67

ওমর ফারুক (শামীম), ব্যুরো চীফ, ইউরোপ: গত ৭ নভেম্বার পর্তুগালের জাতীয় পুলিশ আন্তেনিও কস্তার বাসভবন এবং বেশ কয়েকটি সরকারি মন্ত্রির বাসভবনে তল্লাশি চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করেন।
একটি লিথিয়াম উত্তোলন এবং হাইড্রোজেন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিওর চিফ অব স্টাফকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী কস্তার বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দেয় প্রসিকিউটর অফিস।এরপর প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সোসার সঙ্গে দেখা করে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আন্তোনিও কস্তা।

তবে পদত্যাগ করার আগে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৬২ বছর বয়সী কস্তা। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিচার ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি। যদি সন্দেহজনক কিছু থাকে, বিচারব্যবস্থা সেটি কোনো বাধা ছাড়াই দেখতে পাবে। আমি আইনের ঊর্ধ্বে নই।

পর্তুগালের বিরোধীদল এ দুর্নীতির ঘটনায় পুরো সরকারের পদত্যাগ চেয়েছে।

দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে দেশটির অবকাঠামোমন্ত্রীকেও।

পর্তুগালের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নামে হওয়া এ দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সুপ্রিম কোর্ট।

যে হাইড্রোজেন ও লিথিয়াম উত্তোলন প্রকল্পে দুর্নীতির জেরে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগর করলেন সেটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়ন রয়েছে।

পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো কে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন ডাকবেন নাকি সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মঙ্গলবার বলেছিলেন কস্তার চিফ অফ স্টাফ, ভিটার এসকারিয়াকেও আটক করা হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ আরও নিশ্চিত করেছেন যে অবকাঠামো মন্ত্রী জোয়াও গালাম্বা এবং পর্তুগিজ পরিবেশ সংস্থার প্রধান নুনো লাকাস্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

- Advertisement -

কস্তার সমাজতান্ত্রিক সরকার পর্তুগালের বিভিন্ন অঞ্চলে লিথিয়াম নিষ্কাশনের পরিকল্পনাগুলিকে সার্বিক সমর্থন করে আসছে ইইউ। কিন্তু নিম্নমানের কাঁচামাল সহ বিভিন্ন ব্যয়ের অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্যের জন্য এই প্রকল্পগুল বিতর্কের মধ্যে পড়ে গেছে।

সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা কস্তা ২০১৫ সালে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ায় বাম দলগুলির সাথে জোট গঠন করে তার দল সরকার গঠন করে।

সরকার গঠন করে তার সরকার পর্যটন বিকাশে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। এতে পর্তুগাল পর্যটনের জন্য হটস্পটে পরিনত হয়।

তার সরকারের আরেকটি নীতি গ্রহণ করেন তা হল অভিবাসন নীতি সহজ করা। এই জন্য তার সরকারকে অভিবাসন বান্ধব সরকার ও বলা হয়।

পর্যটনের উপর কোভিডের প্রভাব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যায় কম জন বল নিয়োগ ও বিনিয়োগ, সেইসাথে দেশব্যাপী আবাসন সংকট তার সুরকারকে সমালোচনার মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। অভিবাসননীতিকে সহজ করা ও অনেক সাধারণ পর্তুগিজ ভালভাবে নেয়নি।

তার সরকারের সময় পাবলিক সেক্টরের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ থাকা সত্ত্বেও সোশ্যালিস্ট পার্টি ২০২২ সালের আইনসভা নির্বাচনে দেশের সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।

সর্বশেষ দুই বছরেরও কম সময়ে তার সরকারের বিভিন্ন কেলেঙ্কারির জন্য সরকারের কার্যনির্বাহীর এক ডজনেরও বেশি সদস্য বিভিন্ন কারনে পদত্যাগ করেছেন।

এই দিকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইইউ প্রেসিডেন্ট পদ খালি হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী থাকার কারনে ইউরোপীয় কাউন্সিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তিনি একক প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন। পর্তুগিজ রাজনীতিবিদ সহ অন্যান্য ইইউ নেতাদের পছেন্দর তালিকায় ছিলেন তিনি। এছাড়াও ফরাসি ভাষায় তার সাবলীলতা একটি প্লাস হিসাবে দেখা হত।

কস্তার পদত্যাগে সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়েছে বলে মনেকরা হচ্ছে, এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল পরবর্তীতে আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে গেলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তার পদত্যাগে কিছু পর্তুগিজ খুশি হলেও অনেক সাধারণ পর্তুগিজ ও অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করতেছে। তিনি সাধারণ পর্তুগিজ ও অভিবাসীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। অভিবাসী বান্ধব হওয়ার জন্য সকল অভিবাসীরা তাকে সারাজীবন স্মরণ রাখবে।

Loading...

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More